ডিজিটাল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ঢাকা থেকে প্রকাশিত অনলাইন সংবাদ পত্র সিটিজেন পোস্ট।

By Rakib
  ডিজিটাল যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ঢাকা থেকে প্রকাশিত অনলাইন সংবাদ পত্র সিটিজেন পোস্ট।

শহর ও গ্রামের জীবনের প্রতিচ্ছবি

আজকের দিনে শহর ও গ্রামের জীবনযাত্রার মধ্যে যে বিশাল পার্থক্য রয়েছে, তা আমাদের সকলেরই জানা। একদিকে শহরের ব্যস্ততা, আধুনিকতা আর উন্নয়নের ছোঁয়া, অন্যদিকে গ্রামের সাদামাটা জীবন, প্রকৃতির সান্নিধ্য আর ঐতিহ্যের গন্ধ। কিন্তু এই দুই ভিন্ন জগতের মধ্যে যে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে, তা অনেক সময়ই আমাদের চোখ এড়িয়ে যায়। আজ আমরা সেই অদৃশ্য সেতুর কথাই বলব, যা শহর ও গ্রামকে একসূত্রে বেঁধে রাখে।

শহরের চাকচিক্যের আড়ালে

ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা - এই শহরগুলোর নাম শুনলেই মনে ভেসে ওঠে উঁচু অট্টালিকা, ব্যস্ত রাস্তাঘাট, মল-সিনেমা হল আর রেস্তোরাঁর ছবি। কিন্তু এই চকচকে বাহ্যিক রূপের পেছনে লুকিয়ে থাকে অনেক অজানা কাহিনী।

প্রতিদিন সকালে যখন শহরবাসীরা অফিসে যাওয়ার জন্য বের হন, তখন রাস্তার ধারে চা বিক্রেতা মোতালেব মিয়া তার স্টলে চায়ের কেটলি চাপিয়ে দেন। গত পাঁচ বছর ধরে তিনি এই একই জায়গায় বসে চা বিক্রি করছেন। "বাড়ি নোয়াখালীতে। সেখানে চাষবাস করতাম, কিন্তু ভালো আয় হত না। তাই ঢাকায় এসে এই ব্যবসা শুরু করেছি।" মোতালেব মিয়ার মতো অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন গ্রাম থেকে শহরে আসেন জীবিকার তাগিদে।

অন্যদিকে, রাজধানীর গুলশান এলাকার একটি বহুতল ভবনের অফিসে বসে থাকেন ব্যবসায়ী আনিসুর রহমান। তিনি বলেন, "আমার পৈতৃক বাড়ি ময়মনসিংহে। সেখানে এখনো আমাদের কৃষিজমি আছে। প্রতি মাসে একবার করে সেখানে যাই, জমির দেখভাল করি।" শহরে থেকেও গ্রামের সঙ্গে যোগসূত্র বজায় রেখেছেন তিনি।

এভাবেই শহর ও গ্রামের মধ্যে চলছে অবিরাম আদানপ্রদান। গ্রাম থেকে আসা মানুষেরা শহরকে দিচ্ছেন শ্রম আর উদ্যম, আর শহর তাদের দিচ্ছে জীবিকা ও সুযোগ। এই পারস্পরিক নির্ভরতা থেকেই জন্ম নিচ্ছে এক নতুন অর্থনৈতিক বাস্তবতা।

গ্রামের মাটিতে উন্নয়নের ছোঁয়া

অনেকেই মনে করেন, উন্নয়ন শুধু শহরেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু বাস্তবতা অনেক ভিন্ন। আজ গ্রামেও পৌঁছে গেছে আধুনিক প্রযুক্তির আলো।

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার দূরবর্তী একটি গ্রামে বাস করেন কৃষক আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, "আগে আমরা জমিতে পানি দিতে গিয়ে অনেক কষ্ট পেতাম। এখন সোলার প্যানেল দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করে সেচ দিচ্ছি। এতে খরচও কম হচ্ছে, আবার সময়ও বাঁচছে।"

শুধু কৃষিতেই নয়, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও গ্রামে এসেছে আমূল পরিবর্তন। রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার একটি গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এখন রয়েছে কম্পিউটার ল্যাব। শিক্ষক মোঃ জহিরুল ইসলাম জানান, "আমাদের ছাত্রছাত্রীরা এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে পড়াশোনা করছে। এতে তাদের জ্ঞানের পরিধি অনেক বেড়েছে।"

স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রেও গ্রামে এসেছে নতুন দিগন্ত। টেলিমেডিসিন সেবার মাধ্যমে এখন গ্রামের মানুষ বাড়িতে বসেই পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ। সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার একটি গ্রামে বসবাসকারী রেহানা বেগম বলেন, "গত মাসে আমার মেয়ের জ্বর হয়েছিল। আমরা মোবাইল ফোনে একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলে চিকিৎসা নিয়েছি। এতে অনেক সময় ও টাকা বেঁচেছে।"

এভাবে ধীরে ধীরে গ্রামের চেহারা পাল্টে যাচ্ছে। শহরের সুবিধাগুলো এখন গ্রামেও পৌঁছে যাচ্ছে, যা গ্রাম-শহরের ব্যবধান কমিয়ে আনছে।

কৃষিতে নতুন দিগন্ত

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি এখনো কৃষি। কিন্তু এই খাতে যে পরিবর্তন আসছে, তা অভাবনীয়। আধুনিক প্রযুক্তি ও গবেষণার ফলে কৃষিতে এসেছে নতুন মাত্রা।

দিনাজপুরের কাহারোল উপজেলার কৃষক মোঃ আব্দুল করিম জানান, "আগে আমরা শুধু ধান-পাট চাষ করতাম। এখন আমরা হাইব্রিড জাতের সবজি চাষ করছি। এতে উৎপাদন বেড়েছে, আয়ও বেড়েছে।"

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের একজন বিজ্ঞানী ড. শামীমা নাসরিন বলেন, "আমরা এমন ধানের জাত উদ্ভাবন করেছি যা লবণাক্ত মাটিতেও জন্মাতে পারে। এতে দক্ষিণাঞ্চলের কৃষকরা উপকৃত হচ্ছেন।"

শুধু উৎপাদন নয়, কৃষিপণ্যের বাজারজাতকরণেও এসেছে আমূল পরিবর্তন। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে এখন কৃষকরা সরাসরি ক্রেতার সাথে যোগাযোগ করতে পারছেন। ফলে মধ্যস্বত্বভোগীদের হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন তারা।

রংপুরের একজন কৃষক মোছাঃ রেহেনা বেগম বলেন, "আগে আমি যে দামে আমের ব্যাপারীদের কাছে বিক্রি করতাম, এখন তার চেয়ে অনেক বেশি দামে সরাসরি ঢाকার দোকানদারদের কাছে বিক্রি করতে পারছি।"

এভাবে কৃষিতে নতুন নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে যাচ্ছে। গ্রামের অর্থনীতি শক্তিশালী হচ্ছে, যার প্রভাব পড়ছে সামগ্রিক অর্থনীতিতে।

শিল্পায়নের নতুন ধারা

শিল্পায়ন মানেই যে শুধু বড় বড় কারখানা, তা নয়। আজ গ্রামেও গড়ে উঠছে ছোট ছোট শিল্প কারখানা, যা স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙ্গা করছে।

নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে গড়ে উঠেছে হস্তশিল্পের একটি ক্লাস্টার। এখানকার জরি-চিকন কাজের শাড়ি বিদেশেও রফতানি হচ্ছে। স্থানীয় উদ্যোক্তা আবু সাঈদ বলেন, "আমাদের এখানে প্রায় ১০০০ পরিবার এই শিল্পের সাথে যুক্ত। এতে গ্রামের মহিলারাও আয়ের সুযোগ পাচ্ছেন।"

গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলায় গড়ে উঠেছে ডেইরি ফার্মের একটি নেটওয়ার্ক। এখান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার লিটার দুধ ঢাকায় সরবরাহ করা হয়। একজন ডেইরি ফার্ম মালিক মোঃ শফিকুল ইসলাম জানান, "আমরা এখন আধুনিক পদ্ধতিতে গরু পালন করছি। এতে উৎপাদন বেড়েছে, মান নিয়ন্ত্রণও সহজ হয়েছে।"

কুমিল্লার দাউদকান্দিতে গড়ে উঠেছে খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প। এখানে আচার, চাটনি, মুড়ি-মুড়কি ইত্যাদি তৈরি হয়ে সারা দেশে রফতানি হচ্ছে। একজন উদ্যোক্তা সালমা বেগম বলেন, "আমরা এখন ফলমূল শুকিয়ে চিপস্‌ বানাচ্ছি। এতে ফলের অপচয় কমছে, কৃষকরাও ভালো দাম পাচ্ছেন।"

এসব ছোট ছোট শিল্প কারখানা গ্রামীণ অর্থনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করছে। গ্রাম থেকে শহরে পাড়ি জমানোর প্রবণতা কমছে, বরং গ্রামেই কর্মসংস্থান ত